নিউজবাংলা-শুক্রবার, ০২ অক্টোবর:

নিউজবাংলা ডেস্ক: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বিচার দাবিতে এলাকায় শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা।

 

এদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ ও পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় শিশুটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার সত্যতা স্বীকার করলেও তারা বলেন, তদন্ত শেষে বলা যাবে কে গুলি করেছেন। তারা আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল্যাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এর আগেও একাধিকবার মদ্যপ অবস্থায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গভীর রাতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিষ্ণু রাম রায় জানান, সংসদ সদস্য লিটন এর আগেও উপজেলার বামনডাঙ্গার চৌরাস্তা মোড়, রেল স্টেশন, শিববাড়ী মোড়, কানার মোড়, পাইটকাপাড়া মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় রাত-বিরাতে গুলি ছুঁড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দিনরাত পরিশ্রম করে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনে কাজ করছেন তখন একজন সাংসদের এমন আচরণ মানুষের মধ্যে দল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে।

উপজেলা বাসদ (মার্ক্সসবাদী) আহ্বায়ক বিরেন চন্দ্র শীল বলেন, একজন সংসদ সদস্য যিনি মানুষের নিরাপত্তা প্রদান করবেন, তার কাছে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার।

শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সুন্দরগঞ্জের গোপালচরণ ব্র্যাক মোড়ে ওই শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়। আহত স্কুলছাত্র সৌরভ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ১৮ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সৌরভের বাবা সাজু মিয়া জানান, সৌরভ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে চাচার সঙ্গে রাস্তায় হাঁটাহাটি করছিল। এ সময় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম গাড়িতে করে ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ব্র্যাক মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সৌরভের চাচা শাজাহানকে ডাক দেন। ডাকে সাড়া না দিলে তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়েন সাংসদ। এতে সৌরভের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে দুটি ও বাম পায়ের হাঁটুর নিচে একটি গুলি লাগে। এসময় সৌরভ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার চাচা শাহাজাহান এগিয়ে আসেন। পরে সাংসদ লিটন শাহাজাহানের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করতে উদ্যত হন। শাহাজাহান প্রাণ ভয়ে দৌঁড়ে বাড়িতে পালিয়ে যান। পরে এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ সৌরভকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে। সেখান থেকে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে তাকে রমেকে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি আরো জানান, মেডিক্যালে নেওয়ার পথে সাংসদ লিটন ও তার লোকজন সৌরভকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটির পথরোধ করে। পরে তারা কৌশলে সেখান থেকে রমেকে যান।

এদিকে পুলিশ ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শিউলি বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের সহিংসতা এড়াতে পুলিশ সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি জলকামান নিয়ে এসেছে।

শুক্রবার দুপুরের পর পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রংপুরে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে তিনি দেখেছেন। সে এখন আশঙ্কামুক্ত। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজবাংলা/একে