নিউজবাংলা-শুক্রবার, ০২ অক্টোবর:

বাসাইল(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের গ্রাম নাহালী এ.এইচ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে।

সুপারের বিভিন্ন দূর্ণীতির কথা উল্লেখ করে, তা তদন্তের জন্য মাদ্রাসা ম্যানিজিং কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য মাসুদুর রহমান ও আলাল উদ্দিনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) বরাবরে দাখিল করেছেন। লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসার এই সুপার গোপন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীর নিকট থেকে বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে অবাদে নিয়োগ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অত্র মাদ্রাসায় এ পর্যন্ত যতগুলো শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন তা মেধার ভিত্তিতে নয়, বরং মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে সুপারের আজ্ঞাবহ প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব প্রার্থীর নিয়োগ বৈধ করার জন্য অবৈধ ভাবে ভূয়া প্রতিদ্বন্দ্বি সাজিয়ে সুপারের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সরকারী নিয়োগ বিধিমালার তোয়াক্কা না করে সহকারী সুপার পদেও সাইদুর রহমানকে তার নিকট থেকে বিপুল অর্থ ঘুষ নিয়ে ২জন অনবিজ্ঞ ভূয়া প্রতিদ্বন্দ্বি দেখিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী সুপার সাইদুর রহমান জানান, গত ২০১১ সালে সরকারী বিধি মোতাবেক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছি, কোন প্রকার টাকা পয়সা আমাকে ডুনেট করতে হয়নি। নিয়োগ আছে শিক্ষক নেই, ভূয়া শিক্ষক যার ইনডেক্স নং- ৩৪১৩১৮ আমানুল্লাহ নামের শিক্ষকের সরকারী বেতন-ভাতা উত্তোলন করে সুপার নিজে আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন বলে জানান অভিযোগকারীরা। এ ছাড়াও দাখিল পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি. আদায় করে সুপার একাই আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী ইমরান, ইমরান হাসান,আল আমিন ,সোহান , রায়হান, আলফাজ সহ অনেকেই। তারা বলে ফরম পূরণে আমাদের নিকট থেকে ৪ হাজার ২ শ করে টাকা নিলেও আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের সময় যাবতীয় খরচ নিজেরাই চাঁদা তুলে বহন করেছি। আবার পাশ করার পর প্রশংসা পত্র বাবদ আমাদের নিকট থেকে ৪ শ করে টাকা নিয়েছে। এদিকে ভূয়া ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে, পেশি শক্তির বলে সুপার তার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার লক্ষে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে হাত করে নিজের আজ্ঞাবহ মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদ গঠন করে। উক্ত বিতর্কিত কমিটি গঠন ও ভূয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনের উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেন আদালত। নিয়োগ বানিজ্য, ঘুষ, সুদের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা ও মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের হিসাবে অনিয়মসহ সকল দূর্ণীতির নায়ক এ সুপারের অপসারনসহ অবৈধ নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অপসারন দাবী করেছেন এলাকার অধিকাংশ মানুষ। তবে সরেজমিন পর্যবেক্ষন কালে এব্যাপারে সাধারন মানুষে মাঝে দেখাগেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

অভিযুক্ত সুপার আনিছুর রহমান এব্যাপারে বলেন, আমি কোন প্রকার অনিয়ম বা দূর্ণীতি করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক ,মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানী মূলক। ম্যানিজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী বিগত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখের দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক লোককথা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যথাযথ নিয়মে নিয়োগ কার্যক্রম চালানো হয়। অভিযোগকারীরা তখনো কমিটির অভিভাবক সদস্য ছিলেন। কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়ম মাফিক অভিযোগকারীদেন সন্তান অত্র মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত না থাকায় তারা সদস্য হতে পারেননি । নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সুপার জানান অভিযোগকারী মাসুদের ভাগনীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলেই তার যত ক্ষোভ। এদিকে আবুল কাশেম নামের এক প্রার্থীর আবেদন ব্যাকডেটে গ্রহণ করিনি বলে আমার উপর তাদের আক্রোশ।

এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা মির্জাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) সেলিম রেজা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের বরাবরে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মুনিরা সুলতানা জানান, আমরা মাত্র তদন্ত রিপোর্টটি হাতে পেয়েছি, রিপোর্টটি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করে যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় আইনী ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।

 

 

নিউজবাংলা/একে