ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক চায় না পুলিশ

নিউজবাংলা: ২০ ডিসেম্বর, রোববার:

ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু‘ নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাবকে নাকচ করেছে। ইসির একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠকে ‌ঊর্ধ্বতন ও মধ্যম পর্যায়ের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এ সুপারিশ তুলে ধরেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলার জন্য কিছু রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর অসন্তোস প্রকাশ করেছে।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা প্রশাসক(ডিসি), পুলিশ সুপার এবং রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

বৈঠকে পুলিশ এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক সাংবাদিক বুথের পাশে দীর্ঘক্ষণ অব্স্থান করে ভোটের কার্যক্রম সম্প্রচার করে থাকে যা ভোট গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি করে। এজন্য ভোটের দিন সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে থেকে যাতে সংবাদ সংগ্রহ করে সেজন্য নিয়ম চালু করা উচিত।

সূত্র আরও উল্লেখ করে, বৈঠকে আরেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ভোটের দিন সাংবাদিকদের আচরণের ওপর বিশেষ নিয়মকানুন প্রণয়নের সুপারিশ করেন। অন্যথায় তা অতীতের ন্যায় ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করা এবং  বাইরে অব¯’ান করা নিয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি তৈরি করতে পারে।

বৈঠকে কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, মিডিয়ার একটা অংশ তাদের ব্যবসায়ীক নীতি অনুসারে সবসময় নেতিবাচক সংবাদগুলো তুলে ধরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক এক নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে জানান, এর প্রতিক্রিয়ায় ইসি বলেন, কমিশন সাংবাদিকদের ওপর এমন ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। কারণ সংবাদমাধ্যম হাতেনাতে অনিয়ম খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করে।

তবে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিবুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের ভোট কেন্দ্রের পাশে দীর্ঘক্ষণ না থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক একসঙ্গে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তা ভোটের কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে। তাই এক গ্র“প অন্য গ্র“পকে সুযোগ দিতে কিছুক্ষণ থাকার পর ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিত।

এপ্রিলে ঢাকা ও চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু সাংবাদিক ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা বাধার মুখোমুখি হন।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকায় ইসি মনে করছে, কিছু পৌরসভায় নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, গণমাধ্যম প্রায় প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরছে। কি রিটার্নিং কর্মকর্তারা দাবি করছেন, এমন কিছুই হচ্ছে না। কোনটা সত্য? রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সংবাদ প্রতিবেদনের তদন্ত করা উচিত।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারবৃন্দ বিগত কয়েক নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকার সমালোচনা করেন।

সিইসি বলেন, বিগত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্যের উপস্থিতিতে কয়েকটি ভোট কেন্দ্র আটকিয়ে রাখা ও ব্যালট ঠাসাঠাসির ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবিলম্বে সাড়া দিতে হবে।

আরেক কমিশনার বলেন, বিগত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়মকানুন ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় দেশে ও দেশের বাইরে উভয় জায়গায়ই তাদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে।

এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা প্রস্তাব করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেহেতু মাঠ পর্যায়ে অবস্থান করে তাই তারা শোকেজ নোটিশ প্রদানে সাহস করতে নাও পারে। তাই ইসিকে শোকেজ নোটিশ দিতে হবে এবং এমপি ও মন্ত্রীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইন পদক্ষেপ নিতে হবে।

যদিও ইসি এ বিষয়ে কোন মনযোগ দেয়নি। ইসি বলে, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এটা ঘনিষ্ঠভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে, বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে ‌ঊর্ধ্বতনন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক চরমপন্থা কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে উত্তরের জেলাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করেন।

জঙ্গিরা নির্বাচনী প্রচারণার জনসমাগম স্থলে টার্গেট করতে পারে বলেও এক কর্মকর্তা সতর্ক করেন।

অপর গোয়েন্দা কর্মকর্তা সতর্ক করেন, সামনের দিনগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দলীয় কোন্দল বাড়তে পারে।

বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এসময় তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীদের প্রচারণায় সামগ্রিক পরিস্থি’তি অনুকূলে রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থি’তি সম্পর্কে করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থি’তিতে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই।

সুত্র-শীর্ষ নিউজ

নিউজবাংলা/একে

Share This:

Comments

comments

Previous: রাহবা প্রতিরক্ষা অবসর প্রাপ্ত সৈনিক কল্যাণ সংস্থার কমিটি গঠন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*