নিউজবাংলা- ১৬ সেপ্টেম্বর, বুধবার:

ঢাকা: অলোক চুরাশিয়া ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাশ করেছেন। অথচ তিনি এখন একটি পিয়নের চাকরি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি সরকারি দপ্তরের পিয়ন পদে চাকরির জন্য যে ২৩ লাখ মানুষ আবেদন করেছেন অলোকও তাদের একজন।

অলোক বলেন, ‘কোথাও কোনো চাকরি নেই। ফলে পিয়ন পদের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সেখানে আবেদন করি। একেবারে বেকার থাকার চেয়ে যে কোনো একটি কাজ করাও ভালো।’

শুধু অলোক নয় এমন আরো শত শত তরুণ আছে যারা একই রকম চিন্তা করে।

তাদের মতে, বড় চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে বরং পিয়নের চাকরি করাই ভালো। কারণ এতে অন্তত মাসে ১৬ হাজার রুপি করে আয় হবে। পাশাপাশি সরকারি চাকুরে হওয়ার সুবাদে আরো বেশ কিছু সুবিধাতো রয়েছেই।

অলোককে যখন জিজ্ঞেস করা হল, এই চাকরির জন্য তিনি নিজেকে অতিরিক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন অনুভব করছেন কিনা। উত্তরে অলোক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি কোনো কাজই ছোট নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় বেঁচে থাকার তাগিদে তথাকথিত ‘নিচু’ চাকরি বা কাজ করেন।’

অলোক সম্প্রতি পিএইচডি শেষ করেছেন। তেমনই আরেকজন রতন যাদব বিজ্ঞানে স্নাতক। রেখা ভার্মা এমএসসি পাশ করেছেন বছর দুয়েক আগে। এ রকম লাখো উচ্চতর ডিগ্রিধারী রয়েছেন। কেউ বিটেক, এমটেক, বিএসসি, এমকম, এমবিবিএস!

আরেক স্নাতক আবেদনকারী রতন যাদবের কথায়, ‘কাজের আবার ছোটবড় কী আছে। উচ্চপদে চাকরি নেই, তাই পিয়ন পদেই আবেদন করেছি।’

একই বক্তব্য এমএসসি পাশ করা রেখা ভার্মারও। তিনি বলছেন, ‘চাকরি পাচ্ছি না বলে আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছে তদ্বির করতে হচ্ছে। কত দিন আর এই ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচা যায়।’

উত্তরপ্রদেশ সরকার সম্প্রতি এর বিধান সভা সচিবালয় বা লখনৌয়ের রাজ্যসভায় ৩৬৮টি পিয়ন পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আবেদন জমা পড়েছে ২৩ লাখ! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন! ৩৬৮টি পিওন পদের জন্য ২৩ লাখ আবেদনপত্র দেখে চোখ কপালে উঠেছে সরকারেরই!

ভারতে বেকারত্ব ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছেছে, তারই নজির উত্তরপ্রদেশের এই খবর। পিয়ন পদে ৩৬৮টি কর্মখালির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে আবেদন সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে লখনৌয়ের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। লখনৌয়ের জনসংখ্যা ৪৫ লাখ। সেখানে ৩৬৮টি পিওন পদে আবেদনপত্র জমা পড়েছে ২৩ লাখ। তারমধ্যে আবার ২ লাখ চাকরিপ্রার্থী বিটেক, বিএসসি, এমএসসি, এমকম ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী।

এর মধ্যে আবার ২৫৫ জনই ইঞ্জিনিয়ারিং, কমার্স ও বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী; আছেন ইতিহাস, দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরাও। আর ২৫ হাজার প্রার্থী মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। অথচ চাকরির বিজ্ঞাপনে সর্বোচ্চ যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে মাত্র স্কুল পাশ। এমনকি চাকরিতে নিয়োগে কোনো পরীক্ষাও লাগবে না।

এত আবেদনে চমকে যাচ্ছেন উত্তর প্রদেশের সরকারি কর্মকর্তারাই। উত্তরপ্রেদেশের সচিবালয় অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সচিব প্রভাত মিত্তলের কথায়, ‘আবেদনপত্রের সংখ্যায় আমরা স্তম্ভিত। সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। এত আবেদন আসবে, ভাবতেও পারিনি।’

এ নিয়ে সরকার পড়ে গেছে ধন্দে। কীভাবে এতো মানুষের হ্যাপা কাটানো যায় তা নিয়ে সরকার রীতিমতো বিশেজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শও শুরু করে দিয়েছে। ২৩ লাখ আবেদনকারীর সবাইকে যদি ইন্টারভিউতে ডাকা হয় তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে লেগে যাবে অন্তত চার বছর!

নিউজবাংলা/একে