গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে সফলতা
নিউজবাংলা: ১৫ আগস্ট, শনিবার:
সিলেট: মৌলভীবাজারে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।
টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহও বাড়ছে। টমেটোর ফলন এবং দাম দুটিই ভালো হওয়ায় বেজায় খুশি চাষীরা। তাদের এ সাফল্য দেখে অন্যান্য চাষীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন টমেটো চাষে।
স্থানীয় রমিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) শাহ্ আলম শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি তার বাড়ির পাশে নিজ জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ ইউপি’র শ্রীধরপুর গ্রামে চলতি বছরের মে মাসে প্রায় ৫ শতক জমিতে বন বেগুনের সাথে গ্রাফটেড করা ৪৫০টি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। গ্রাফটেড করা টমেটোর চারা কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। প্রতিটি চারা পরিবহনসহ তার খরচ পড়ে ১৫ টাকা। প্রথম বছরে ছাউনিসহ চাষাবাদে মোট খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বাগান থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে প্রায় ৩০০ কেজি টমেটো বিক্রিও করেছেন। পরবর্তীতে আরো ১ হাজার কেজি টমেটো বিক্রি করতে সক্ষম হন। স্কুলশিক্ষক শাহ্ আলমের হাইব্রিড বারি-৪ জাতের টমেটো চাষ দেখে একই এলাকার বেকার যুবক হান্নান মিয়া প্রায় ১ মাস পর পরীক্ষামূলকভাবে ২ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করেন। তার বাগানে প্রতিটি গাছ পুষ্ট ও প্রতিটি গাছে ফুল এসেছে। প্রথম বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন শেষে আগামী বছর ব্যাপক পরিসরে চাষাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
একই এলাকার কামারকালী নদীর পাশে শৈলেন দাশ সংগ্রাম গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর শীতকালীন টমেটোর চাষ করছেন তিনি। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক টমেটোর গাছ মারা যায়। এছাড়া একসাথে প্রচুর টমেটো বাজারে কৃষকরা নিয়ে গেলেও বিক্রির সময় উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। তিনি গত দুই বছর ধরে শীতকালীন টমেটোর চাষ ছেড়ে দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ শুরু করেন। আর এ গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। কম জমিতে টমেটো চাষ করে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে সাড়াও পড়েছে। তাদের এ টমেটো চাষে সফলতা আসায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এমপি, প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও প্রতিদিন এলাকার বেকার যুবক টমেটো চাষীদের বাড়িতে চাষের পদ্ধতি শিখতে ভীড় করছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কাজী লুৎফুল বারী জানান, সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ। আর এ টমেটো সংগ্রহের প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। সারা বছর সবজির চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন উদ্ভাবিত বারি-৪ জাতের টমেটো চাষ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। গ্রীষ্মকালীন টমেটো পাকাতে কোনো ক্যামিক্যালও ব্যবহার করতে হয় না। গাছ থেকে টমেটো সংগ্রহ করে ঘরে ২/৩ দিন রেখে দিলে এগুলো পেকে যায় এবং রঙও সুন্দর হয়।
বর্ষাকালে উঁচু এলাকায় এই টমেটো চাষ সবচেয়ে সহজ। জমিতে যাতে বৃষ্টির পানি আটকে না থাকে সেজন্য খালের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ইচ্ছে করলে শীতকালেও গ্রীষ্মকালীন টমেটো গাছ থেকে ফলন সংগ্রহ করা যায়। এজন্য বাড়তি খরচেরও দরকার হয় না। জমিতে আর নতুন করে চারাও লাগাতে হয় না। আগের লাগানো গাছের ওপরের পলিথিনের ছাউনি খুলে ফেললেই হবে। এতে টমেটো চাষে খরচও অনেক কম পড়ে। ব্যাপকভাবে টমেটো চাষের সম্প্রসারণ করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশে টমেটোর চাহিদার সিংহভাগ যোগান দেয়া সম্ভব বলে অভিমত দিয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
নিউজবাংলা/একে