নিউজবাংলা: ৩০ আগষ্ট, রবিবার:

নড়াইল :অভাবে স্বভাব নষ্ট এটা সবারই জানা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য এই উক্তিটি? না সব ক্ষেত্রে যে এই উক্তিটি প্রযোজ্য না তারই প্রমাণ দিয়েছেন এক দরিদ্র ইজিবাইক চালক।

বাড়িতে বাঁশের ভাঙা বেড়া। বাবা বর্গাচাষি। নিজে ইজিবাইক চালক। ছয় সদস্যের অভাব-অনটনের সংসার। তবুও লোভ তাকে স্পর্শ করেনি।
মহৎ মনের এই মানুষটির নাম স্বপন গাজী। প্রায় দেড় লাখ টাকা রাস্তায় পেয়ে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি জানতে পেরে এক ব্যক্তি টাকাগুলো ভাগাভাগি করে নেয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন স্বপন গাজী (২৬)। নড়াইল শহরের বরাশুলা এলাকার স্বপনের এমন সততায় মুগ্ধ হয়েছেন মানুষ।
স্বপন গাজী জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইজিবাইক চালিয়ে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ থেকে ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। শহরের পপুলার ক্লিনিকের সামনে পৌঁছলে একটি মোটরসাইকেল তার ইজিবাইকটি অতিক্রম করার সময় ওই মোটরসাইকেল আরোহীর পকেট থেকে টাকার বান্ডেল পড়ে যায়। এ সময় স্বপন চিৎকার করে মোটরসাইকেলের আরোহীকে ডাকেন। স্বপনের ডাক শুনতে না পারায় মোটরসাইকেল আরোহী অদৃশ্য হয়ে যান।
পরে স্বপন টাকার বান্ডেল নিয়ে টাকার মালিককে শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। টাকার মালিককে না পেয়ে বিষয়টি তিনি নড়াইলের জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সাথী তালুকদারকে অবগত করেন। ঘটনার বিবরণ শুনে সাথী তালুকদার স্বপনকে নিয়ে টাকার মালিককে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে নড়াইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কাছে টাকার মালিক সৈয়দ আবদুল্লাহকে (৩৫) চিনতে পারেন স্বপন গাজী। এ সময় সাংবাদিক সাথী তালুকদারসহ বেশ কিছু মানুষের উপস্থিতিতে টাকার মালিক সৈয়দ আবদুল্লাহর হাতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন।
স্বপন বলেন, যার টাকা তার হাতে তুলে দিতে পেরে আমি খুবই খুশি হয়েছি। নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে এই টাকা ভাগ করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। একপর্যায়ে টাকা নেয়ার জন্য আমাকে চাপ দেয়। এমনকি আমাকে মারধরের হুমকিও দেয়। কিন্তু মালিক খুঁজে টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে অটল ছিলাম আমি। তিনি আরো বলেন, আমি ভাড়ায় ইজিবাইক চালিয়ে যা রোজগার করি, তাতেই খুশি।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র সংসারে স্বপন গাজীই তাদের পরিবারে আয়-উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি। স্বপনের বাবা আলী মোস্তফা মাঝে মধ্যে জমিতে কাজ করেন। মা সূর্যবান বেগম গৃহকর্মী। বাবা, মা, এক বোন, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তার সংসার।
নড়াইল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের গাড়িচালক সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, ইজিবাইক চালকের এই দৃষ্টান্ত অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মহৎ মনের মানুষ। এ ঘটনার পর আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার (স্বপন) সততায় খুশি হয়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা নেননি স্বপন।
আবদুল্লাহ জানান, তার গ্রামের বাড়ি নড়াইলের মুলদাইড়ে জমি কেনার জন্য এই টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। তার অফিস (ফায়ার সার্ভিস স্টেশন) থেকে রওনা হয়ে পাঞ্জাবির পকেটে করে ওই টাকা (এক লাখ ৩০ হাজার) নিয়ে শহরের মহিষখোলায় চাচাবাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। সূত্র: নয়া দিগন্ত

নিউজবাংলা/একে