আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন
নিউজবাংলা: ০২ সেপ্টেম্বর, বুধবার:
ঢাকা: ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না বিএনপি এমন ঘোষণা দিয়ে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, “আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে যে নামেই হোক একটি নিরপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেশের মানুষ এখন নির্বাচন চায়।”
.
আজ মঙ্গলবার বিকালে কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে খালেদা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে বিকাল ৫টায় কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান।
তবে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যা এবং বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ঢাকাবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব বাতিল করা হয়।
আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিএনপির অঙ্গ, সহযোগী ও সমর্থক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
৩০মিনিটের বেশি সময়ের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেশ কয়েকবারই আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি হারাতে হবে না, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি প্রধান।
বক্তব্যের শুরুতেই অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান করতে বিএনপিকে বাধা দেয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র না থাকায় এমন আচারণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক গুম দিবন পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে সরকারের উদ্দেশে বলেন, এতো ভয় কেন আপনাদের? গুম, খুন ও গণহত্যা তো তারা (আওয়ামী লীগ) করেছে। এগুলো এতো করেছে যে জনগণের কাছে তারা কী জবাব দেবে।”
বর্তমান সরকার গুম, খুনের তদন্ত করলে সত্য উদঘাটন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।
সরকার বাংলাদেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশ দিয়ে দেশ চালানো যায় না। সরকার এসব বাহিনীকে ইচ্ছামত ব্যবহার করছে। যদিও এজন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ এসব বাহিনীর ভয় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের চাকরি থাকবে না। আমি তাদের বলতে চাই ভয় পাবেন না। আপনাদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা ও কিছু পরগাছা এসব করাচ্ছে। তাই আপনাদের চাকরি যাবে না।”
দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা এর অবসান চাই।”
ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য লীগ এখন শিক্ষক, চিকিৎসক, মহিলাদের পেটাচ্ছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “সবাইকে পেটালেও এদের কাউকে ধরা হচ্ছে না। ধরলে এসব বন্ধ হতো। আমি সরকারের কাছে জানতে চাই ছাত্রলীগ-যুবলীগকে কি পেটানোর লাইন্সেস দেয়া হয়েছে?
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কার্যকর করতে দেয়া হবে না। আমরা ছাত্রদের হয়ে প্রতিবাদ করবো।”
বিদুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি না করলেও খালেদা জিয়া বলেন, “কুইক রেন্টালের ভর্তুকি দেয়ায় এখন আবার এসবের দাম বাড়ানো হয়েছে। কুইক রেন্টালের মালিকরা লাভবান হলেও এখন জনগণের টাকা দিয়ে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার বোঝে না বিদুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে তার প্রভাব সবকিছুর ওপর পড়ে। এখন দ্রব্যমূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মানুষ কি চালডাল কিনবে না বিদুৎ বিল দেবে।”
আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থেকে দূরে সরে গেছে এমন দাবি করে খালেদা বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে যতদিন পরগাছা থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগ শুকিয়ে যাবে। ওইসব পরগাছাদের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জায়গা পান না। এই প্যারাসাইডগুলো থাকলে আওয়ামী লীগ যে একটা বড় গাছ তা শুকিয়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতাসীনরা নোংরা ভাষায় কথা বলে, তাদের কথার জবাব দিতেও লজ্জা লাগে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “অতীতের প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির পথে আসুন। তাহলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে।
তিনি বলেন, “প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি নয়, আমরা জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই। আপনাদের অভয় দিচ্ছি, যে আচরণ আমাদের সঙ্গে করেছেন সে আচরণ আপনাদের সঙ্গে করবো না। নির্ভয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, এই নির্বাচনে বিজয়ী দল রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। এ দেশের জনগণ পরিবর্তন চায়। আমরাও পরিবর্তন চাই। সেই পরিবর্তন অন্য কোনো পন্থায় নয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তন হোক সেটাই আমরা চাই। এ দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসবে। অন্য কোনো দলের ওপর জনগণের আস্থা নেই। সেজন্য দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটিই আমাদের দাবি।”
দল পুনর্গঠন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা দল গোছানোর কাজ শুরু করেছি। নেতাদের বলবো দয়া করে কেউ পকেট কমিটি করবেন না। যারা দলের প্রতি অনুগত, আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে মাঠে থাকবে তাদের পদ দেবেন। যারা ফাঁকিবাজ তাদের পেছনে রাখা হবে।”
অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম।
দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের চৌধুরী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, দলের সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি প্রমুখ।
এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদল, ওলামা দল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎসজীবী দল, তাঁতীদল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের শত শত নেতা-কর্মী আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
নিউজবাংলা/একে