নিউজবাংলা – ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার:
ঢাকা: গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ঈদের তৃতীয় দিনে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। রবিবার দুপুরে দর্শনার্থীদের এ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণায় পুরো পার্ক এলাকা মুখরিত। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পার্কের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাহারা।

পার্ক সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহার দুদিন আগ থেকে পার্কের দর্শনার্থীদের আগমন কমে গেলেও ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। রবিবার ঈদের তৃতীয় দিনে পার্কে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে কু-সাফারি। এতে রয়েছে উন্মুক্ত মাঠে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ, সাদা সিংহ, ভাল্লুক। সাফারি পার্কের নিজস্ব বাসে চড়ে ১০০ টাকার টিকেট কেটে একেবারে কাছ থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যায় হিংস্র বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক। এছাড়া আফ্রিকান সাফারিতে রয়েছে হরিন, জিরাফ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট। সাফারি কিংডমে রয়েছে আকর্ষণীয় মেকাউ ল্যান্ড পাখি এভিয়ারি। এতে প্রবেশ করলেই দর্শকরা হাতে ছুঁয়ে পাখি দেখতে পায়। শিশু পার্কে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা। বিশাল আকৃতির কুমিরের মুখ দিয়ে শিশু পার্কে প্রবেশ করতে রোমাঞ্চিত হয় শিশুরা। মেরিন একুইরিয়ামে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আকর্ষণীয় মাছ। প্রজাপতি পার্কে প্রবেশ করলেই নজর কাড়ে বাহারি রঙের প্রজাপতি। হাতিতে চড়তে দর্শনার্থীরা আনন্দ উপভোগ করেন। এছাড়া রয়েছে ডার্ক গার্ডেন, জলহস্তি, গনেশ এভিয়ার্ডি, ক্রাউন এভিয়ারি। এসব এভিয়ারিতে প্রবেশ করলেই দুর্লভ সব পাখির দেখা মেলে। পার্কের একেবারে নির্জন স্থানে রয়েছে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত ব্রিজ। এ ব্রিজটিও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। পার্কে রয়েছে শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্র, কেঙ্গারু এভিয়ারি, আলপাকা বেস্টনি, ইমু গার্ডেন, লিজার্ড পার্ক। এসব স্পটে দর্শনার্থীরা একেবারে কাছ থেকেই পর্যবেক্ষণ করতে পারে দুর্লভ সব পাখি, প্রাণী। পার্কে রয়েছে ওয়াটার বাঘ, কার্ফ গার্ডেন, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম। এসব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ পরিদর্শন করে দর্শনার্থীরা জ্ঞান আহরণ করতে পারে।

পার্কিং এরিয়ার দু’পাশে কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটি ইভেন্ট ব্যবহার করার জন্য দর্শনার্থীদের পৃথক টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। পার্কের প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা, শিশুদের জন্য ২০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৫ ডলার। এছাড়া পার্কের ভেতরে কুর সাফারিতে বাসে চড়ে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক দেখতে জনপ্রতি ১০০ টাকা, ডার্ক গার্ডেনে বুটে চড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা, মেকাউ ল্যান্ড, পাখি এভিয়ারি, শিশু পার্ক, মেরিন একুরিয়াম প্রজাপতি পার্ক, গনেশ এভিয়ারি, ফিজিয়ান এভিয়ারি, কার্প গার্ডেন, প্রকৃতি বিক্ষণ কেন্দ্র, ন্যাচারাল হিস্টরি অ্যান্ড মিউজিয়ামসহ প্রতিটি ইভেন্ট পরিদর্শনের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা করে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। বাড়তি আনন্দ পেতে হাতির পিঠে চড়ে ভ্রমন করতে গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকা। পার্কে আগত পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্কে আগত হাজার হাজার দর্শনার্থীদের জন্য দুটি মাত্র রেস্টুরেন্ট থাকায় ও বাহির থেকে খাবার পানি আনতে না দেওয়ায় দর্শনার্থীদের চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। এছাড়া দর্শনার্থীদের চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহ ও বাথরুমের ব্যবস্থা কম থাকায়ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পার্কিং এরিয়ায় দর্শনার্থীদের ব্যবহৃত যানবাহনের স্থান সংকুলান না হওয়ায় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাহিরে যানবাহন রাখতে হয়। পার্কের ইজারাদার আলহাজ কবির হোসেন জানান, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি সালাউদ্দিন জানান, প্রতিদিন রুটিন মাফিক ট্যুরিস্ট পুলিশ পার্কের নিরাপত্তায় তারা কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিব প্রসাদ জানান, ঈদের তৃতীয় দিন শেষে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০/৫০ হাজার হতে পারে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নিজস্ব ভলান্টিয়ার, বন বিভাগের কর্মচারী, ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

নিউজবাংলা/একে