ঈশ্বরদীতে মাছ চাষ করে সফল ইয়াকুব
নিউজবাং লা: ১৭ আগস্ট, সোমবার:
মোঃ আব্দুল বাতেন, ঈশ্বরদী(পাবনা)প্রতিনিধি:
মাছ চাষ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঈশ্বরদীর সফল মৎস্য চাষি ইয়াকুব আলী। তিনি ঈশ্বরদীর মৎস্য চাষিদের আইডল হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। শুধুমাত্র মাছ চাষ করেই বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা উপার্জন করে থাকেন।
একজন ভাল মানুষ হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এই মৎস্য খামারের উপার্জিত অর্থ থেকে তিনি গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার জন্য, কন্যা দায়গ্রহস্থ পিতাকে এবং অসুস্থ রোগীদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের খয়েরবাড়িয়া গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে ইয়াকুব আলী পড়াশুনা শেষ করে ধান চাউলের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। অটোমিল হওয়াতে হাসকিন মিলের ব্যবসা ভাল না হওয়ায় দুইটি ভেকু কিনে মাটি কাটার ব্যবসা শুরু করেন। ভেকু দিয়ে অন্যের পুকুর খনন করতে গিয়ে এক সময় নিজের জমিতে একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। নিজ জমিতে এক বিঘার ১টি মাত্র পুকুর দিয়ে পাঁচ বছর আগে মৎস্য চাষ শুরু করেন ইয়াকুব। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এগিয়ে চলেছেন শুধু সামনের দিকে।
বর্তমানে ইয়াকুবের মৎস্য খামারে ১৭ বিঘা জমিতে পুকুরের সংখ্যা রয়েছে ৫টি। ইয়াকুব ঈশ্বরদীর একজন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠিত মৎস্য চাষি। ইয়াকুবের মাছ চাষ দেখে উৎসাহিত হয়ে তার এলাকা ও আশপাশের বেকার যুবকেরা পরামর্শ নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করেছে। মৎস্য চাষের পাশাপাশি ইয়াকুব ছাগলের খামার, ধান চাষ ও সবজি উৎপাদন করে থাকেন। ইয়াকুব তার খামারের নাম দিয়েছেন ইয়াকুব মৎস্য খামার।
বড় মাছ চাষের বিষয়ে ইয়াকুব বলেন, নাটোরের মকুড়ায় পুকুর খনন করতে গিয়ে সেখানে কয়েকটি বড় মাছ চাষের পুকুর দেখতে পাই। মকুড়ার বড় মাছ চাষিদের সাথে আলোচনা করে এসে ঈশ্বরদী উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলমের পরামর্শ নিয়ে নিজ খামারে সুষম খাবার দিয়ে বড় মাছের চাষ শুরু করি। টাকা থাকলেও বাজারে বড় মাপের মাছ পাওয়া যায়না। বড় মাছ চাষ না করায় রুই মাছ দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় আমাদের ছেলে-মেয়েরা রুই মাছ চিনবে না। তিনি আরও বলেন, আমার খামারের সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে। আমার এলাকার অন্য মৎস্য চাষিরা সুষম খাদ্যের পরিবর্তে মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন। এই মাছ খেলে মানব দেহের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে চাষ করলে মাছ বড় হবে না বরং মাছের দেহে পচন ধরবে, মাছ মারা যাবে। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ বন্ধে এবং মাছ চাষিদের সচেতন করা জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তিনি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাফল্যের বিষয়ে মৎস্য চাষি ইয়াকুব বলেন, দেশে বেকারত্ব দুরীকরণ এবং আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করার জন্য এ পেশায় এসেছি। দেশের এবং জনসাধারনের কথা চিন্তা করে এদেশের মানুষের পুষ্টির যোগান দিতেই বেকার যুবকদের মৎস্য চাষে উৎসাহিত করে তুলেছি। একটু হলেও তো দেশের উপকারে আসতে পেরেছি। নিজের পাশাপাশি দেশকেও নিয়ে ভাবতে হবে। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে, দেশের উন্নয়ন ঘটবে। সরকারি ও বে-সরকারি সংস্থার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, তারা যদি আমাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন তাহলে আমার খামারকে আরও প্রসারিত করে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য্য এবং শ্রম মানুষকে স্বর্ণ শিখরে পৌছে দেয় তার জলন্ত প্রমাণ আমি নিজেই। কারণ ধৈর্য্য ধরে সততার সাথে শ্রম বিনিময় করেছি বলেই আজ আমি এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমি বিশ্বাস করি এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সততার সাথে শ্রম দিয়ে মাছ চাষ করলে একেকজন আমি ইয়াকুবের চাইতেও ভালো অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তাই চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছু না ছুটে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষে মনোনিবেশ করলে যেমনি এদেশ থেকে বেকারত্ব কমবে, সেই সাথে দেশের মাছের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে বৈকি ।
ঈশ্বরদী উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, খয়েরবাড়িয়ার ইয়াকুব মৎস্য খামারটি পরিপাটি ভাবে সাজানো। ঈশ্বরদীতে একমাত্র ইয়াকুব মৎস্য খামারে বড় মাপের মাছ চাষ করা হয়। এই খামারের মালিক ইয়াকুব আলী সুষম খাবার দিয়ে দুই কেজির উপরের সাইজের মাছ চাষ করেন। ইয়াকুব মৎস্য খামার থেকে বিভিন্ন হ্যাচারীর মালিক ডিমওয়ালা মা মাছ কিনে এনে রেনু উৎপাদন করে মাছ চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। ইয়াকুব মৎস্য খামারে মাছ চাষের কারণে কিছুটা হলেও দেশের মাছের ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হবে। ইয়াকুব মৎস্য খামারটি পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করলে আরও বেশি ভালো করবেন বলে তিনি এ কথা জানান।
নিউজবাংলা/একে