নিউজবাংলা- ১২সেপ্টেম্বর শনিবার:

মৌলভীবাজার: দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের শতাধিক বিল ভরাট হয়ে গেছে। হাওর দিয়ে প্রবাহিত জুড়ী, ফানাই, সোনাই, কন্টিনালাসহ নদী খাল ছড়ার অস্থিত্বও বিলীন হওয়ার পথে। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর।

 

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর সরকারগুলো ও জনপ্রতিনিধিরা বারবার হাওর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও এ ব্যাপারে এখনও বাস্তবভিত্তিক তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে প্রতিবছর হাওরে জলাবদ্ধতাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। বর্তমানেও একই কারণে হাওরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এমন দাবি হাওর বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় লোকজনের।

মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী হাওরের বর্তমান জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ বলতে পারেননি। হাওরের খালবিল ভরাট হওয়া ছাড়াও আর কী কী কারণ থাকতে পারে তা নিরূপণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে তিনি জানান, হাকালুকি হাওরের জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সভায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ নির্ণয় ও এ বিষয়ে প্রশাসনের করণীয় নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোস্টাল অ্যান্ড ওয়েট ল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি দক্ষিণ এশিয়ার হাওরগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পরিবেষ্টিত এই হাওরের আয়তন প্রায় ৪৫ হাজার একর। পরিবেশ অধিদপ্তর, সেন্টার ফর ন্যাচারেল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) ও বিডব্লিউবিএমপি ২০০৫ সালে এক যৌথ জরিপ চালিয়ে এই হাওরে ২৭৬টি ছোট-বড় বিলের অস্তিত্ব পায়। এর মধ্যে তিন একরের নিচে ছোট বিলের সংখ্যা ৮৪টি। এছাড়া তিন একর থেকে ২০ একরের নিচের মাঝারি বিল ১১৪টি এবং ২০ একরের ঊর্ধ্বে বড় বিল ৭৪টি। বাকি চারটি বিলের কোনো তথ্য পায়নি সংস্থাগুলো। এছাড়া হাওর দিয়ে প্রবাহিত হযেছে ভারত থেকে আসা জুড়ি, ফানাই, সোনাই কন্টিনালাসহ ৭-৮টি নদী ও ছড়া।

হাকালুকি হাওরে দীর্ঘদিন কাজ করার আলোকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ পর্যন্ত এই হাওরের ২৫ ভাগের মতো নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া যেগুলো আছে সেগুলোরও তলদেশ ভরাট হয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। দিন দিন হাওরের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে হাওরে এখন অকালবন্যা, অতিবন্যাসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। বর্তমানেও হাওরে যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তার অন্যতম কারণ এটি। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে হাওর এলাকার শতাধিক গ্রামের অন্তত তিন লাখ গরিব মানুষকে। হাওরে অসময়ে জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর কৃষকরা কোটি কোটি টাকার ফসল হারিয়ে সর্বসান্ত হচ্ছে।

হাকালুকি হাওরের বিল ও নদ-নদী ভরাটের ব্যাপারে হাওর বিশেজ্ঞরা জানান, হাওরের উজানে সীমানার উভয় পাড়ে ব্যাপক আকারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। যে কারণে প্রতি বছল ভারি বৃষ্টিপাতের সময় পানির সাথে বিপুল পরিমাণ পলি মাটি এসে এসব নদীনালা ও খাল বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে হাওরের অন্তত ৩২ প্রজাতির মাছ বিলীন হয়ে গেছে। গোটা হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

হাওর বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বাদশাহসহ স্থানীয়রা জানান, হাওরে খালবিল ভরাটের কারণে হাকালুকি হাওরে এখন প্রায়ই জলাবদ্ধতাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। কিন্তু বৃহত্তর এই হাওরের উন্নয়নে কোনো সরকারি পদক্ষেপ নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

নিউজবাংলা/একে