নিউজবাংলা- ১১সেপ্টেম্বর শুক্রবার:
ঢাকা: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সকালটা ছিল চমৎকার। সবাই নিজেদের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটা।

আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং৭৬৭ বিমানটি প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানে। ১১০ তলা ভবনের ৮০তম তলায় বিমানটি আঘাত হানে। মুহূর্তের মধ্যেই কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়। বহু মানুষ আটকা পড়ে ভবনের বিভিন্ন স্থানে।
আজ নাইন-এলিভেন। ইতিহাসের সেই বিভৎস দিন যেদিন টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছিল। ২০০১ সালের এইদিনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার। কে বা কারা ওই হামলা চালিয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দাকে দায়ী করে আফগানিস্তান ও ইরাকে গণহত্যা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনার প্রায় তেরো বছর পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীব্যাপী ওই বিভৎসতার রেশ এখনও রয়ে গেছে।
৪টি বিমান ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। দু’টি বিমানের লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। অন্য একটি বিমান আঘাত হেনেছিল পেন্টাগনে, যেটির অবস্থান ওয়াশিংটনের ঠিক বাইরেই। আর চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়েছিল পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে।
ওই হামলায় তিন হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছিল। আহত হয়েছিল আরো দশ হাজারের মত মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থাই ছিল গুরুতর। নিহতদের মধ্যে চারশ’য়ের বেশি পুলিশ এবং দমকল কর্মীর সদস্যরা ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দমকল কর্মীদের জন্য এটিই হয়তো ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল বিমানের পাইলট হয়ত মাতাল হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় ঢুকে পড়ে। এরপর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভবনের বিভিন্ন অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর আছড়ে পড়ে। তখনই স্পষ্ট হয় বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। সেসময় স্থানীয় টেলিভিশন মাধ্যমগুলো ওই ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল।

অসংখ্য মানুষ যখন টুইন টাওয়ারের ধ্বংসযজ্ঞ দেখছিলেন ঠিক সেসময় স্থানীয় সময় ৯ টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং৭৫৭ বিমান আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে। সেখানেও শুরু হয় বিপর্যয়। ওই হামলায় পেন্টাগনের ১২৫ জন সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। এছাড়া হামলাকারী বিমানের ৬৪ জন আরোহীর সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ঠিক কেন্দ্রে এ হামলার ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সাউথ টাওয়ারটি ধ্বসে পড়ে। ধূলা আর ধোঁয়ায় যেন মেঘ তৈরি হয়েছিল সেখানে। আশেপাশের এক ডজনের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছিল।অনেক স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ধসে পড়ে অপর টাওয়ারটিও। ধসে পড়া ভবন থেকে লোকজনকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া বহু উদ্ধারকর্মী্রও মৃত্যু হয়েছিল।
নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে চতুর্থ বিমানটি উড়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। কিন্তু বিমানটি যাত্রা করেছিল নির্ধারিত সময়ে চেয়ে দেরিতে। ইতোমধ্যেই অনেক যাত্রীই টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন।
বিমানটি ছিনতাইয়ের পর যাত্রীরা বুঝতে পেরেছিলেন কি হতে চলেছে। কয়েকজন যাত্রী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ককপিটে হামলা করেন, বাধা দেন ছিনতাইকারীদের। ১০টা ১০ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
হামলাকারীরা বিমানটিকে আসলে কোথায় নিতে চেয়েছিলেন সেটি পরিষ্কার নয়। ধারনা করা হয়, হোয়াইট হাউজ, মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ‘ক্যাম্প ডেভিড’ কিংবা পশ্চিম উপকূলে থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন একটিই তাদের লক্ষ্য ছিল ।

ওই হামলায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট জুড়েই প্রচন্ড উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশকে সারা দিনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউজে ফেরেন তিনি। রাত নয়টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের সর্বোচ্চ ভবনগুলোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত কাঁপাতে পারে নি। এসব কর্মকাণ্ড ইস্পাত গলাতে পারবে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়তার যে ইস্পাত তাকে নয়”।
সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তারা এবং যারা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের মধ্যে কোন তফাত নেই”।

নিউজবাংলা?একে