নিউজবাংলা: ০১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার:
ঢাকা: মেয়ের জন্য মা-বাবার পরিশ্রমের অন্ত নেই। কিন্তু নিজের কন্যাশিশুর জন্য এবার সিরীয় বাবার অপরিসীম ভালোবাসা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। কোলে শিশুকন্যাকে ঘুমিয়ে রেখেই রাস্তায় রাস্তায় কলম বিক্রি করছেন তিনি। ৪ বছরের ফুটফুটে কন্যাশিশুকে দেখেই বোঝা যায়, পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর ক্লান্তিতে বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকার।

গত সপ্তাহে টুইটারে এমনই ১টি ছবি পোস্ট করেন অসলোর স্বেচ্ছাসেবী কর্মী গিসুর সিমোনারসন। নিচে ক্যাপশনে লেখা— সিরিয়ার বাসিন্দা এক বাবা রাস্তায় কলম বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পোস্টটি প্রায় ৩৫ হাজার বার রি-টুইট করা হয়েছে। ছবিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, অনেকেই ওই কলম বিক্রেতাকে সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
তবে ছবিটি কে বা কারা তুলেছিলেন, সে ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানতেন না গিসুর। ফলে অনেকেই তার কাছে ওই কলম বিক্রেতার পরিচয় জানতে চাইলে বেশ মুশকিলে পড়ে সে। অবশ্য পরে কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী মিলে ওই কলম বিক্রেতাকে সাহায্য করার অভিযানে নেমে পড়েন।
মানবাধিকার কর্মী গিসুর জানালেন, লেবাননের বৈরুতের রাস্তায় কলম ফেরি করে যিনি বিক্রি করছেন- ওনার নাম আব্দুল। আর কোলে ঘুমন্ত শিশু রিম। মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কলম বিক্রি করেই কোনো রকমে সংসার চালান তিনি।
আব্দুলের বরাত গিয়ে গিসুর জানান, ৪ বছর আগে ১টি চকোলেট কারখানায় কাজ করতেন তিনি। স্ত্রী, মেয়ে রিম এবং ছেলে আবদেলিল্লাহকে নিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। কিন্তু এরই মধ্যে সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। কোন উপায় না দেখে মিশরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু স্ত্রীর অনিচ্ছার কারণে তা আর হয়নি।
এরপর আব্দুলের কয়েক বন্ধু তাকে লেবাননে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেই মতো তিনি চলে আসেন বৈরুতে। এখানে চকোলেট কারখানায় কাজ নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো কারখানায় কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় কলম বিক্রি শুরু করেন।
তবে আব্দুলকে খুঁজে পাওয়ার পর গিসুর আনন্দ যেন ধরে না। নিজেই জানান, আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। আব্দুলের জন্য ৫ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহের ইচ্ছা ছিলো। ৩ ঘণ্টার মধ্যেই তা উঠে আসে। আর সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তহবিলে জমা পড়ে প্রায় ৮০ হাজার ডলার।
গিসুর ভাষ্য মতে, সারাবিশ্বে আব্দুলের ছবি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে, যেটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না সে। আর ৮০ হাজার ডলারের কথা শুনে তো আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলো আব্দুল।

নিউজবাংলা/একে